Header Ads

সত্যের পথে

 গল্পের নাম: “সত্যের পথে” 


 ছোট্ট একটি গ্রাম — নাম তার চানপুর। গ্রামটি ঘিরে আছে সবুজ ধানক্ষেত, আর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট নদী। এখানেই বাস করত ১২ বছরের এক ছেলেটি, নাম ইমরান। সে ছিল চঞ্চল, বুদ্ধিমান, কিন্তু মাঝে মাঝে অলস আর মিথ্যা বলা ছিল তার একটা বদঅভ্যাস।

ইমরানের বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। কঠোর কিন্তু ন্যায়পরায়ণ। আর মা ছিলেন গৃহিণী—স্নেহময়ী, দয়ালু। তারা সবসময় চেয়েছেন ইমরান যেন একজন সৎ, শিক্ষিত এবং দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে বড় হয়। 

শুরুটা…

একদিন সকালে স্কুল যাওয়ার সময় মা ইমরানকে বললেন,
“আজ কিন্তু স্কুল থেকে সরাসরি বাড়ি চলে এসো, কোথাও দেরি করো না।”
ইমরান মাথা নেড়ে বের হয়ে গেল।

কিন্তু স্কুল শেষে বন্ধুরা তাকে বলল, “চলো নদীর ধারে গিয়ে আম কুড়াই, মজাও হবে।”
ইমরান প্রথমে না করলেও পরে রাজি হয়ে গেল। সময় যেন উড়ে গেলো। বিকেলের রোদ ঢলে পড়তেই সে বাড়ি ফিরল।

বাড়িতে ফিরে মা জিজ্ঞেস করলেন, “আজ এত দেরি কেন হলো?”
ইমরান মিথ্যা বলে, “আজ স্যার দেরি করে ছেড়েছেন, তাই দেরি হয়েছে।”

মা চোখে-মুখে সন্দেহ নিয়ে তাকালেও কিছু বললেন না। কিন্তু বাবা যখন শুনলেন, তখন শুধু বললেন, “সত্য যত কঠিনই হোক, তা বলার সাহস থাকতে হয়, ইমরান। মিথ্যা মানুষকে দূর্বল করে দেয়।”

ইমরান কিছু না বলেই চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল।

দ্বিতীয় ঘটনা

পরের সপ্তাহে স্কুলে এক প্রতিযোগিতা হলো – “সত্য বলার পুরস্কার”। শর্ত ছিল: প্রতিদিন রাতে ডায়েরিতে সারা দিনের কাজ এবং কোন কোন সময়ে সে সত্য বলেছে বা মিথ্যা বলেছে, তা লিখে আনতে হবে।

ইমরান প্রথমে ভেবেছিল, “আমি তো সব লিখে সাজিয়ে নিয়ে যাব। তাতে তো পুরস্কার আমিই পাব।”
কিন্তু হঠাৎ বাবার বলা কথা তার মনে পড়ে গেল – “মিথ্যা মানুষকে দুর্বল করে।”
সে সিদ্ধান্ত নিল, সে যা সত্য তাই-ই লিখবে, পুরস্কার না পেলেও সমস্যা নেই।

দিন গড়িয়ে গেল। প্রতিযোগিতার শেষ দিনে, শিক্ষক সবার ডায়েরি পড়লেন। অনেকেই খুব ভালো লিখেছিল, কেউ কেউ সাজিয়ে লিখেছিল, কিন্তু ইমরানের লেখা ছিল সরল, স্বীকারোক্তিমূলক।

সে ডায়েরিতে লিখেছিল –
“আজ সকালে মায়ের সাথে ঝগড়া করে স্কুলে গিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম ভুল করেছি। ফিরে এসে ক্ষমা চেয়েছি। বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে সময় ভুলে গিয়েছিলাম, কিন্তু মা যখন জিজ্ঞেস করলেন, সত্যি কথাই বলেছি।”

শিক্ষক তার ডায়েরি পড়ে একটু থেমে বললেন,
“পুরস্কার সেই পাবে, যে শুধু সত্য বলেছে নয়, বরং যিনি ভুল স্বীকার করতে শিখেছে। ইমরান, তুমি এসো।”

সবাই অবাক! ইমরান লজ্জায় মাথা নিচু করল, কিন্তু ভিতরে কোথাও একটা গর্ব বোধ করল।

শিক্ষা ও পরিবর্তন

এই ঘটনার পর ইমরান আস্তে আস্তে বদলে যেতে লাগল। সে এখন সময়মতো স্কুলে যায়, মিথ্যা বলে না, এবং সবচেয়ে বড় কথা — দায়িত্ব নিতে শিখেছে।

কিন্তু চ্যালেঞ্জ তখনই এলো, যখন একদিন গ্রামের একটি বাড়িতে আগুন লাগে। চারদিকে হইচই পড়ে যায়। সবাই দৌড়ে আসে সাহায্য করতে।
ইমরান তখন বাড়িতে ছিল। সে পানি নিয়ে ছুটে যায়, কিন্তু কেউ একজন সন্দেহ করল, “এই আগুন কি কোনো দুষ্টু ছেলের কাজ নয়?”
এক বৃদ্ধ বললেন, “ইমরান তো আগেও কয়েকবার পটকা ফাটিয়ে গাছের ডালে আগুন লাগিয়েছিল, হয়তো ও-ই করেছে!”

এই অভিযোগ শুনে ইমরান থমকে যায়। কয়েক বছর আগের ছোট একটা দুষ্টুমি যেন তাকে আজ বড় বিপদে ফেলে দিল।

কিন্তু সে এগিয়ে গিয়ে বলল, “আমি কিছু করিনি, তবে যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, আমি মেনে নেব। কিন্তু দয়া করে আগে আগুন নিভাতে সাহায্য করুন।”

সবাই তার সাহস দেখে অবাক হয়ে গেল।

পরিণতি

দিন শেষে প্রমাণ হলো, আগুন লেগেছিল রান্নাঘরের চুলা থেকে, কোন দুষ্টুমি নয়। যারা সন্দেহ করেছিল, তারা এসে ক্ষমা চাইল।

ইমরানের বাবা মুচকি হেসে বললেন,
“দেখেছো ইমরান, সত্য পথে হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু শেষটা সবসময় ভালো হয়।”

ইমরান এখন গ্রামে সবার প্রিয়। গ্রামের ছোটরা তাকে অনুসরণ করে। সে যখন বলে, “ভুল করলে লুকিয়ে রাখো না, শিখো এবং শোধরাও,” তখন সবাই মন দিয়ে শোনে।


গল্পের শিক্ষা:

১. মিথ্যা ক্ষণিকের মুক্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে।
২. সত্য বলার সাহস একজন মানুষকে সমাজে সম্মানিত করে তোলে।
৩. ভুল স্বীকার করা দুর্বলতা নয়, বরং একজন মানুষের সাহসিকতার পরিচয়।
৪. নেতৃত্ব গড়ে ওঠে দায়িত্বশীলতা ও সততার মাধ্যমে।
৫. ভবিষ্যৎ গড়তে চাইলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়।

 

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.