পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে আমাদের করণীয় বর্জনীয় কী কী?
জিলহজ্ব মাসের চাদ দেখা গেছে। পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে আমাদের করণীয় বর্জনীয় কী কী?
🌙 পবিত্র ঈদ উল আজহার গুরুত্ব
ঈদ উল আজহা হজ্বের অন্যতম অংশ এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর আল্লাহর পথে আত্মত্যাগের স্মরণে পালন করা হয়। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা হয় এবং ত্যাগ, ধৈর্য ও তাকওয়ার শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা হয়।
✅ করণীয় বিষয়সমূহ
১. তাকবিরে তাশরিক পড়া
-
জিলহজ্বের ৯ তারিখ (আরাফার দিন) ফজর নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসর নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা সুন্নত।
তাকবির:
اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
২. কোরবানি প্রদান করা
-
সামর্থ্যবান প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব (হানাফি মতে)।
-
কোরবানি ১০ জিলহজ্ব থেকে ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত করা যায় (৩ দিন)।
৩. চুল-নখ না কাটা (কোরবানির নিয়ত থাকলে)
-
যারা নিজে কোরবানি করবেন, তারা জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি না দেয়া পর্যন্ত নখ, চুল, দাড়ি বা ত্বক থেকে কিছু কাটা থেকে বিরত থাকবেন (সুন্নত)।
৪. সততা ও খালিস নিয়তে কোরবানি করা
-
কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে, লোক দেখানো বা অহংকারের উদ্দেশ্যে নয়।
৫. ঈদের নামাজ আদায় করা
-
ঈদের দিন সকালে ঈদগাহ বা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
-
নামাজ শেষে খুৎবা শোনা এবং মুসলিমদের সঙ্গে কোলাকুলি, সালাম বিনিময় করা উত্তম।
৬. কোরবানির গোশত তিন ভাগ করা
-
এক ভাগ আত্মীয়স্বজন, এক ভাগ গরিব-দুঃখী, এক ভাগ নিজের জন্য রাখা উত্তম।
৭. হালাল ও নির্ধারিত বয়সের পশু কোরবানি করা
-
গরু বা মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর বয়স।
-
ছাগল বা ভেড়া: কমপক্ষে ১ বছর বয়স (বা যদি দেখতে ১ বছরের মতো লাগে)।
❌ বর্জনীয় বিষয়সমূহ
১. লোক দেখানো কোরবানি করা
-
কোরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সুতরাং অহংকার বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা উচিত নয়।
২. অযোগ্য পশু কোরবানি করা
-
চোখ অন্ধ, খুব দুর্বল, খোঁড়া বা অসুস্থ পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
৩. গোসতের অপচয় বা অপব্যবহার
-
কোরবানির গোশত অপচয়, অহেতুক ফ্রিজে জমিয়ে রেখে নষ্ট করা, অসহায়দের না দিয়ে শুধুই নিজের জন্য রেখে দেয়া অনুচিত।
৪. চুল ও নখ কাটা (যদি কোরবানির নিয়ত থাকে)
-
কোরবানিদাতার জন্য কোরবানি হওয়ার আগ পর্যন্ত নখ ও চুল না কাটা মুস্তাহাব। ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম না মানা উচিত নয়।
৫. অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতি
-
ঈদ আনন্দ উপলক্ষ্যে গান-বাজনা, অপসংস্কৃতি, মদ্যপান, অশ্লীল পোশাক বা বিনোদনের আয়োজন একেবারেই বর্জনীয়।
💡 কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ
-
কোরবানি করা না গেলে স্থানীয়ভাবে গরিবদের সাহায্য করুন।
-
পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করুন; জবাই করার সময় অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া হারাম।
-
জবাইয়ের আগে ও পরে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
-
পশু জবাইয়ের জন্য অভিজ্ঞ এবং ধার্মিক কাসাই নির্বাচন করুন।
এই সময়টা শুধুই আনন্দ বা উৎসবের নয়, এটি আত্মত্যাগ, তাকওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। আসুন, আমরা সবাই ঈদ উল আজহা যথাযথভাবে পালন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হই।
ঈদ মোবারক! 🌙🕌🐄🐐
কোন মন্তব্য নেই